মেহেরপুর প্রতিনিধি, সেলিম রেজা: মেহেরপুরে এবছর পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছে কৃষক।তবে কৃষকের মুখে কিছুটা স্বস্তির হাসি ফুটিয়েছে পাটকাঠি। পাটের দাম খুব একটা ভালো না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। এ কারণে এখন মেহেরপুরের অলি গলিতে, পাকা সড়ক, মাঠঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের। জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে মাচা তৈরি করে রাখছেন চাষিরা।
কৃষক মিলন হোসেন জানান, পাটকাঠি কোথাও আবার পাটখড়ি নামেও পরিচিত। আগে সস্তা জ্বালানির বাইরে পাটকাঠির তেমন ব্যবহার ছিল না। আর কিছু ভালোমানের পাটকাঠি পানের বরজে আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন আর এটি মূল্য-হীনভাবে পড়ে থাকে না। বাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় পাটের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের পাট চাষি ফজলুল হক জানান ,কয়েক বছর আগেও পাটখড়ির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন। ১০০ মোটা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। শুধু পাট বিক্রি করেই নয়, এবার পাটখড়িও আমাদের এলাকায় কৃষকের আশা জাগিয়েছে।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের পাটচাষি মজনুর রহমান জানান, পাটকাঠি একসময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এই পাটকাঠি পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বাইরের জেলা থেকেও ফঁড়িয়ারা পাটকাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের পাটচাষি সাইদুর রহমান জানান, বছর পাট চাষ করে জনখরচ উঠছেনা। জাগ দেওয়ার জন্য পুকুর খরচ, মুনিষ খরচ দিতে গিয়ে চাষীর কিছু নেই। এখন পাটকাটি বিক্রিই একমাত্র ভরসা। তবে, পাটকাটির এবার দাম বেশি। কারন এলাকার মানুষ নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ফঁড়িয়া ও মহাজনরা এসে পাটকাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমান জানান, সাত বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন । এখন জেলায় প্রায় এক ডজন কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তিনি এসেছেন মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে পাটকাটি কিনতে।
সাতক্ষীরা জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ী সামসুর রহমান জানান, আগের মতো আর কম দামে পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় এবার মোট ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের রং না আসায় এবং বড় কিছু মিল বন্ধ থাকার কারণে পাটের বাজারে দাম কম। এতে কৃষকরাও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে এই পাটকাঠি।